Select Language

[gtranslate]
৯ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার ২৫শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মুক্তি বাহিনীর সর্বাধিনায়ক বলাইলাল দাস মহাপাত্রকে শ্রদ্ধাঞ্জলী।

‌‌ সুস্মিত মিশ্র

খন তিনি স্কুলের ছাত্র,সেই সময়ে ইংরেজ শাসকদের বিরুদ্ধে চলছে বিলেতি বর্জনের আন্দোলন। বিলাতি কাপড় পুড়িয়ে ফেলার অগ্নিকুণ্ডে নিজের লাটিম মার্কা দামী বিলাতি চাদর আহুতি দিয়ে স্বদেশ মন্ত্রী দীক্ষা নিয়েছিলেন। এরপর মানিকাবসানে দাশরথি পণ্ডার বাড়িতে গিয়ে কংগ্রেসের স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে যোগদান করেন এবং গ্রামে গ্রামে কংগ্রেসের আদর্শ প্রচার করতে থাকেন।তিনি বলাইলাল দাস মহাপাত্র।

১৯০৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি মহকুমার রামনগর থানার লালপুরে জন্ম গ্রহন করেন বলাইলাল দাস মহাপাত্র।তাঁর পিতার নাম বিহারীলালের দাস মহাপাত্র ও মাতা সারদাময়ী দেবী।



১৯২১ খ্রিস্টাব্দে যখন তিনি স্থানীয় বালিঘাই ধাওয়া এম. ই স্কুলের ছাত্র, তখন অসহযোগ আন্দোলনে বিলাতি কাপড় পুড়িয়ে ফেলার অগ্নিকুণ্ডে নিজের লাটিম মার্কা দামী বিলাতি চাদর আহুতি দিয়ে স্বদেশ মন্ত্রী দীক্ষা নিয়েছিলেন। এরপর মানিকাবসানে দাশরথি পণ্ডার বাড়িতে গিয়ে কংগ্রেসের স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে যোগদান করেন এবং গ্রামে গ্রামে কংগ্রেসের আদর্শ প্রচার করতে থাকেন।

১৯২১ খ্রিস্টাব্দে কাঁথির জাতীয় বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের উদ্যোগে পরিচালিত তারকেশ্বর সত্যাগ্রহ আন্দোলনে যোগ দিয়ে তিন মাস কারাদণ্ড ভোগ করেন। জাতীয় বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে ড. রাজেন্দ্রপ্রসাদ পরিচালিত জাতীয় কলেজ বিহার বিদ্যাপীঠে ভর্তি হন।


এই বিদ্যাপীঠে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু প্রেরিত সামরিক অফিসারের কাছে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে সামরিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে গান্ধীজির অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে বিহার বিদ্যাপীঠের পড়া শেষ করে বিদ্যাপীঠের ছাত্রদের সামরিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলেন।

মেদিনীপুর,বাঁকুড়া প্রভৃতি স্থানের আন্দোলন সংগঠনের দায়িত্ব পান। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে বৃটিশ সরকার তাঁকে কলকাতা,হাওড়া,হুগলি,বর্ধমান ও চব্বিশ পরগনা থেকে বহিষ্কার করে মেদিনীপুরে অন্তরীণ রাখে। মেদিনীপুরে থাকার সময়ে কাঁথির বহিত্রকুণ্ডা গ্রামে কংগ্রেস নেতা ও কর্মীদের নিয়ে কাঁথি মহকুমা সমর পরিষদ গঠিত হলে তাঁকে স্বরাষ্ট্র দপ্তর ও ভারত ছাড়ো আন্দোলনে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী তথা মুক্তি বাহিনীর সর্বাধিনায়কের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে বেলবনিতে স্বেচ্ছাসেবক অফিসার ট্রেনিং ছিলেন। ২৬ সেপ্টেম্বর পুলিশি আক্রমণে আটজন ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান। তাঁকে লুকিয়ে দেয় গ্রামবাসী।তাঁকে গ্রেফতারের জন্য বৃটিশ সরকার ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে দশ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে এবং তার অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করে। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি গ্রেফতার হয়ে এক বছরের কারাদণ্ড ভোগ করেন।



১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে মুক্তি লাভের পর আজাদ হিন্দ বীরেন্দ্র বাহিনীতে নেতৃত্ব দেন। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে রামনগর কেন্দ্র থেকে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় নির্বাচিত হন। শেষে জয়প্রকাশ নারায়ণের আদর্শে কিষান মজদুর প্রজা পার্টিতে যোগ দেন। পরবর্তীকালে দলটি প্রজা সোস্যালিস্ট পার্টি নামে পরিচিত হলে ওই দলের হয়ে দীর্ঘদিন ১৯৬২,১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে বিধানসভার সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে জনতা দলের প্রার্থী হয়ে বিধায়ক হন। বিধায়ক হিসাবে এলাকায় কেবল উন্নয়ন নয়, খাদ্য আন্দোলন, রাজ্য পুনর্গঠন প্রভৃতি গণ-আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য নেতৃত্ব দিয়েছেন। কবি ও গীতিকার হিসাবে বলাইলাল দাস মহাপাত্রের সুখ্যাতি ছিল।

১৯৯৭ সালের ২৬ জুলাই প্রয়াত হন এই স্বাধীনতা সংগ্রামী।দেশের স্বাধীনতার ৭৫ তম বর্ষ উদযাপনের অমৃৎ মহোৎসবেও প্রচারের বাহিরে থেকে গেলেন তিনি ।

এই মহান মানুষটিকে তাঁর জন্ম দিবসে শতকোটি প্রনাম জানায় এখন সংবাদ পরিবার

ekhansangbad
Author: ekhansangbad

Related News