গায়ত্রী রায় বিশ্বাস :- জানো আজ ভেবেছিলাম একটু তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়বো, হাতে ক্রিম মাখতে মাখতে মধু রবির উদ্দেশ্যে বললো।
রবি বিছানায় বসে ল্যাপটপ এ কাজ করছে । মধুর কথার উত্তরে বললো কেন? কোনো বিশেষ কারণ?
-“বিশেষ কারণ আবার কি? কাল ক্লায়েন্ট মিটিং আছে, সুভাষ দা বলেছে যে ভাবে হোক ৮-৩০র মধ্যে ঢুকতে হবে। ভাবো তবে কটায় উঠতে হবে।আর ভালো লাগেনা। ” কথাগুলো বলতে বলতে কৌটো থেকে ক্রিম নিয়ে হাতে মাখতে শুরু করলো। রবি আড় চোখে মধুর দিকে তাকিয়ে দেখলো মনোযোগ সহকারে হাতে ঘষেই চলেছে। বললো মধু একটা কথা বলি। খারাপ পাবে না তো।
–‘ধ্যাৎ খারাপ পাওয়ার কি আছে বলোনা’, কনুই ঘোষতে ঘষতে জবাব দিলো মধু।
একবার দেবে? অনেক দিন দাওনা।- ল্যাপটপ টাকে ভেজিয়ে করুন চোখে গোবেচারা মুখে কথাটা মধুর দিকে ছুড়ে দিলো।
কয়েক সেকেন্ডের জন্য চুপ হয়ে গেলো মধু ।এমন আবদারের কথা রবির কাছ থেকে শুনবে আশা করেনি। এসব কর্ম ছুটির দিন ছাড়া না করাই ভালো, কারণ মধু আর সকাল সকাল উঠতে পারেনা। সব জেনেও এমন আবদার। ভাবনায় পরে গেলো । আয়নার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে। বরের এমন নিষ্পাপ আবদারে দুশ্চিন্তায় পরে গেলো যেন।ভাবলো মানলাম ইচ্ছে হতেই পারে, কিন্তু এতো ক্রিম মেখেছি, এতক্ষন ধরে, এগুলো থাকবে আর কিছু! হাতে পায়ে মুখে ঘাড়ে ঠোঁটে, কোথাও বাদ নেই, … সব নষ্ট।
–“কি হলো উত্তর দিলে না যে।” রবির যেন তোর সইছে না আর।
“আজ হবে না, অন্যদিন, কাল তাড়াতাড়ি অফিস আছে, অসুবিধা হবে “.. চুলে জট ছাড়াতে ছাড়াতে একটু ঘম্ভীর গলায় জবাব দিলো মধু।
“মানে, তুমি অফিস তাড়াতাড়ি যাবে তার জন্য দেবেনা, এসব কথাও আমাকে শুনতে হবে? আমার যে ভীষন ইচ্ছে করছে তার কোনো দাম নেই ‘
দাম কেন থাকবেনা রবি, সময়টাও তো তোমার দেখতে হবে।
– “দেখেছো কখনো আমি তোমাকে এমন জোর করেছি, আজ ভীষন ইচ্ছে হচ্ছে তাই চাইছি” রবির ব্যাকুলতা যেন বাধ ভেঙে ফেলছে।
মধু একদৃষ্টে আয়নার দিকে তাকিয়ে। কি করা উচিত? বেচারা কেমন করছে, একটু আগে বললেই হতো, শরীর জুড়ে এত্ত মাখামাখি করতে হতোনা।
-” ধুর বড্ডো জেদি তুমি “বলে উঠে দাঁড়ালো মধু।
পরনের হাউসকোট টা খুলে ফেললো।
সরু ফিতের লাল নাইটি তে মধু কে কোনো লাস্যময়ী নারীর থেকে কম কিছু লাগছিলো না। আড় চোখে দেখে ঠোঁটের কোনে দুস্টু একটু হাসি দিয়ে আবার ল্যাপটপ এ ডুব লাগালো রবি।
মধু দুই আঙুলে চুলের ডগায় আলতো ম্যাসাজ করতে করতে রবির কোলে ঢোলে পড়তে গেলে সঙ্গে সঙ্গে আঁতকে উঠলো রবি ।এক ঠেলা দিয়ে কোল থেকে তুলে দিয়ে বললো “একি করছো? নিজের জায়গায় সও, আমার গায়ে ঢোলে পড়ছো কেন? “
আঁচম্বিৎ, হতবম্ভ মধু অবাক দৃষ্টি তে রবির দিকে তাকিয়ে বললো “মানে? তুমি তো চাইলে?”
-“আমি কখন চাইলাম? “
-“এইতো একটু আগেই তো বললে একবার দেবে? “
– বাজে কথা একবারও বলবে না, তোমার মনে এসব ইন্টু বিন্টু সবসময় ঘোরে, তাই আমি হা বললে হাওড়া বোঝো তুমি । “
–” রবি একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু, তুমি মন খারাপ করবে বলে, নইলে কাল আমার এতো চাপ…. “
“ওই তো ওটাই তোমার ফন্দি, সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারবেনা, আমাকে দিয়ে টিফিন লাঞ্চ রেডি করাবে তাইতো?”
-” রবি এবার কিন্তু একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে,”বলতে বলতে
রেগে মেগে উঠে বসে চুলটাকে টাইট করে খোপা করে নিলো। মুখ খানা নাইটির লালের সাথে মিলে যাচ্ছে যেন। শ্বাস প্রস্বাস এর আওয়াজ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।অবস্হা বেগতিক দেখে রবি বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। মধু যত বেশি রেগে যায় ততো বেশি চুপ হয়ে যায়। থম ধরে বসে থাকে, শুধু চোখ গুলো যেন কেমন করতে থাকে মনে হয় চোখ দিয়েই আগুন বেরোবে। আজও তার ব্যাতিক্রম নয়। রবি আড় চোখে দেখে নিলো যে মধুর চোখে এ কে ৪৭ সেট করাই আছে। চোখে চোখ পড়লেই ঝাঁঝরা করে দেবে। তবু ও আবার বললো
“দেবে কি দেবে না “
মধু ডিপ ফ্রিজ এ রাখা বরফের মতো ঠান্ডা গলায় বললো “কি চাই তোমার “।
“ও তুমি জানোনা কি চাইছি?”
—না আমি জানিনা
—”তুমি তো বলেছিলে তোমার সামনে ওই নাম উচ্চারণ করতে না, সাথে এও বলেছিলে ইচ্ছে হলে তোমার পারমিশন নিতে হবে।
—”নাম বলো কি চাই তোমার।”
—”সিগারেট”
রবির মনে হলো সারা ফ্ল্যাট কাঁপতে শুরু করেছে, সব কিছু ভেঙে পড়বে যেন। দুম দাম করে বিছানা থেকে নেমে ড্রয়ার থেকে সিগারেট এর প্যাকেট টা মুখের ওপর ছুড়ে দিয়ে আবার বিছানায় উঠতে যাবে, রবি বাধা দিয়ে বললো “লাইটার টা তো দাও “। মধু লাইটার টা রবির দিকে ছুড়তে ছুড়তে বললো “খাও আর মরো “।
রবি এক মুহূর্ত দেরি করলো না। ব্যালকনির দরজাটা খুলে বাইরে যেতেই একদল ঠান্ডা হাওয়া রবীকে জাপ্টে ধরে লুকোচুরি খেলা শুরু করলো যেন। নিঝুম রাত, আসে পাশের দু একটা ফ্ল্যাট ছাড়া সবার লাইট অফ হয়ে গেছে।ঘন্টা খানেক আগে বৃষ্টি হয়েছে।এখনো যেন বৃষ্টির গুঁড়ো গুলো ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। চারিদিক নিঃশ্বব্দ, স্ট্রিট লাইট গুলো নির্বিকার ভাবে আলো দিয়ে যাচ্ছে।মাঝে মাঝে একটা দুটো বাইক গাড়ি হুস হুস করে বেরিয়ে যাচ্ছে। কান পাতলে শোনা যাচ্ছে টুপ্ টাপ জল পড়ার আওয়াজ। কোথায় যেন ঝিঁঝি পোকা আর ব্যাং মিলে গান ধরেছে। রবি ব্যালকনি তে রাখা চেয়ার টা টেনে বসে, পা দুটো ব্যালকনির রেলিং এ তুলে নিয়ে সিগারেট টা ধরিয়ে দু টান দিয়ে হাওয়া তে ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে বললো —”আহ্হ্হঃ এবার আমি মরে যেতেও রাজি মধু মরে যেতেও রাজি “।