Select Language

[gtranslate]
৯ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার ২৫শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আধুনিক সংখ্যাপুরুষ সি আর রাওকে শ্রদ্ধাঞ্জলী।

সুস্মিত মিশ্র :- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কলকাতা আসেন মিলিটারিতে চাকরির আশায়, বয়স কম বলে চাকরি পাননি।তারপর নানান ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে সেই মানুষটি হয়ে গেলেন সংখ্যাতত্ত্বে ভারতের দ্বিতীয় প্রাণপুরুষ।এ দেশে যাঁকে এই শিরোপা দেওয়া যায় তিনি কালিয়ামপুডি রাধাকৃষ্ণ রাও, যাঁকে সি আর রাও বলেই সারা বিশ্ব চেনে, প্রয়াত হলেন ভারতের চন্দ্রযান-৩-এর অবতরণের প্রাক্-মুহূর্তে। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ১০৩ বছর। আমেরিকার বাফেলোয় মারা গেলেন তিনি।



১৯২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর তৎকালীন মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির হাদাগালির এক তেলুগু পরিবারে জন্ম রাওয়ের। ১৭ বছর বয়সেই অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে অঙ্কে স্নাতকোত্তর পড়তে যান। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংখ্যাতত্ত্বে স্নাতকোত্তর।  কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংখ্যাতত্ত্বে এমএ-র প্রথম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন রাও। পরে এক বছরের প্রশিক্ষণ নিতে ১৯৪১ সালে রাও যোগ দেন কলকাতায় আইএসআইয়ে। এখানেই সংখ্যাতত্ত্বে ভারতের প্রাণপুরুষ প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশের সান্নিধ্যলাভ। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত আইএসআইয়ের সচিব ও অধিকর্তার দায়িত্বেও ছিলেন।


সংখ্যাতত্ত্বকে তিনি বলেছিলেন ‘শেষ আশ্রয়’। সারাটা জীবন অঙ্ক আর সংখ্যাতত্ত্বকে আশ্রয় করেই কাটিয়ে দিলেন কল্যমপুড়ি রাধাকৃষ্ণ রাও। তার মধ্যে চারটে দশকে লেগে রইল কলকাতার ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউট বা আইএসআই-এর নিবিড় ছোঁয়া। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পৃথিবীতে তিনি নিত্যনতুন সূত্র দিলেন সংখ্যাতত্ত্বের দুনিয়াকে, তৈরি করলেন বহু ছাত্র। বিবিধ সম্মান আর স্বীকৃতিতে তাঁকে নিরন্তর কুর্নিশ জানাল বিশ্ব।

আমেরিকান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউট এক বার বলেছিল, রাওয়ের কাজ শুধু সংখ্যাতত্ত্ব নয়— অর্থনীতি, জেনেটিক্স, নৃতত্ত্ববিদ্যা, ভূতত্ত্ববিদ্যা, চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতো নানা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। তিনি জীবন্ত কিংবদন্তি।


তাঁর বিখ্যাত বই স্ট্যাটিসটিক্স অ্যান্ড ট্রুথ: পুটিং চান্স টু ওয়র্ক অধ্যাপক সি আর রাও উৎসর্গ করেছেন তাঁর মাকে। লিখেছেন, প্রতি দিন ভোর চারটেয় মা তাঁকে জাগিয়ে দিতেন। জ্বালিয়ে দিতেন কুপি, সেই আলোয় ছেলে পড়াশোনা করবে, কারণ শান্ত ভোরে মন তরতাজা থাকে। লিখেছেন, ‘‘আমি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি আমার বাবার বিশ্লেষণী দক্ষতা আর মায়ের পরিশ্রম ও লেগে থাকার ক্ষমতা।’’ অনেকেই জানেন না, তিনি অত্যন্ত শিল্পপ্রেমী। ১৯৭০-এ দিল্লি গিয়ে যখন দেখেন সেখানে কুচিপুড়ি নৃত্যের কোনও প্রতিষ্ঠান নেই, তখন নিজেই একটি অ্যাকাডেমি খোলেন।

চলতি বছরেই ‘ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ় ইন স্ট্যাটিসটিক্স’ পেয়েছিলেন রাও। ‘সংখ্যাতত্ত্বের নোবেল’ বলা হয় এই পুরস্কারকে। এ ছাড়াও তাঁর সম্মানের ঝুলিতে রয়েছে পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ, এস এস ভাটনগর পুরস্কার, রয়্যাল স্ট্যাটিসটিক্যাল সোসাইটির গাই মেডেল স্বর্ণ ও রৌপ্য দুটোই । আমেরিকার পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এবারলি কলেজ অব সায়েন্সের সংখ্যাতত্ত্ব বিভাগের ইমেরিটারস অধ্যাপক পদে ছিলেন প্রবীণ বয়সেও।দৈনিক দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া তাকে সর্বকালের সেরা ১০ ভারতীয় বিজ্ঞানীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।

ভারতের আধুনিক সংখ্যাপুরুষ সি আর রাওকে শতকোটি প্রনাম জানায় এখন সংবাদ পরিবার

ekhansangbad
Author: ekhansangbad

Related News