Select Language

[gtranslate]
৮ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বৃহস্পতিবার ২৪শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

।। দুর্গা ।।

দেবাশীষ চক্রবর্তী :- এ এক আশ্চর্য সমাপতন। আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে পয়লা ডিসেম্বর ঠিক রাত বারোটায় বিপ্লবী বিদ্যুৎ ঘোষালের ফাঁসি হল আর ঠিক সেই সময় তার বউ অলকা প্রথম সন্তানের জন্ম দিল।

বাড়িতে তখন প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনের ভিড়। তারা কেউ এমন কি অলকা বা পরিবারের অন্যান্য কেউই বিদ্যুতের ফাঁসির কারণে কাঁদছে না। গর্বে সবার মুখ-চোখ জ্বল জ্বল করছে। সন্তানের কান্না শুনে সবাই উল্লাসে হাততালি দিয়ে উঠল, “দুর্গা দুর্গা এসেছে।

ইংরেজ-অসুরদের বধ করবে।” অলকা মেয়ের নাম দুর্গা রাখল।
অত্যাচারী ইংরেজ পুলিশ কমিশনার উইলিয়াম গ্রেগকে গুলিতে খতম করে বিদ্যুৎ খড়দায় গোপন আস্তানায় ফিরে গেছিল। যদিও শেষরক্ষা হয়নি। সহযোদ্ধা উদয় সামন্ত সরকারি চাকরির লোভে পুলিশকে সেই ঠিকানা বলে দিয়েছিল।

পুলিশ দেরি করেনি। তাকে ধরে সোজা লালবাজারে এনে অকথ্য অত্যাচার শুরু করল। তবুও তার মুখ থেকে সূর্যসেনা সম্বন্ধে একটাও শব্দ বের করতে পারল না। তিনমাসের মাথায় বিদ্যুতের ফাঁসি হলো।
গ্রেগ প্রতি শনিবার টিটাগড়ে রক্ষিতা এমিলির কাছে যেত। রাত দশটা নাগাদ বেরিয়ে পার্কস্ট্রিটে ফিরত। বড় রাস্তায় চালক গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করত। গ্রেগ একাই গলি দিয়ে হেঁটে এমিলির বাড়িতে যেত। বিদ্যুৎ এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে গ্রেগেকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছিল।


জন্মের কয়েকমাস পর থেকেই দুর্গার মধ্যে একটা অদ্ভুত ক্ষমতা লক্ষ করা গেল। মেয়েটা খারাপ মানুষ চিনতে পারে।কাছাকাছি কোনও খারাপ মানুষ থাকলেই ও কাঁদে, হাত-পা ছোড়ে। আর দেখতে পেলে অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে থাকে।


দুর্গার যখন তিনমাস বয়েস তখন পুলিশের একজন গুপ্তচর ভিখারি সেজে অলকাদের বাড়ির উপর নজর রাখছিল। পুলিশের কাছে খবর ছিল অলকা সূর্যসেনার সক্রিয় সদস্য আর সে নানাভাবে বিপ্লবীদের সাহায্য করে চলেছে। তাই এই নজরদারি।
নকল ভিখারি বাড়ির কাছে আসতেই দুর্গা ছাত-পা ছুড়ে কাঁদতে শুরু করল। কিছুতেই কান্না থামে না। অলকা তাকে কোলে করে বাড়ির বাইরে আসতেই দুর্গা অদ্ভুতভাবে ভিখারির দিকে তাকিয়ে কাঁদতে লাগল। অলকার সন্দেহ হওয়ায় ইশারায় প্রতিবেশীদের সেই ভিখারিকে ধরতে বলল। ব্যস ভিখারির আসল রূপ বেরিয়ে পড়ল।


দুর্গার এই ক্ষমতা বারবার দেখা যেত লাগল। শেষে এমন হল সূর্যসেনার গোপন সভায় অলকা তাকে নিয়ে যেত। বেশ কয়েকবার তার কান্না আর তাকানোতেই সভায় উপস্থিত বিশ্বাসঘাতক ধরা পড়ল।
একবছরের মাথায় দুর্গা আধো আধো কথা বলতে শুরু করল। তার অদ্ভুত ক্ষমতার কথা জেনে নিষ্ঠুর ইংরেজ শাসকরা বিশ্বাসঘাতক উদয়কে দুর্গাকে খুনের দায়িত্ব দিল।
উদয়ের জানত অলকা সূর্যসেনার পক্ষ থেকে প্রতিমাসে জেলবন্দি পুণ্যব্রত গোস্বামীর সুখচরের বাড়িতে তার বাবাকে মাসের খরচ দিতে যায়। রাতে থাকে পরদিন ফিরে আসে। উদয় খবর পেল ডিসেম্বরের পাঁচ তারিখে অলকা সুখচর যাবে।
সে ঠিক করল ওইরাতেই দুর্গাকে মেরে গঙ্গায় ফেলে দেবে। কী আশ্চর্য পাঁচ তারিখের সকাল থেকে সবাইকে চমকে দিয়ে দুর্গা আধো আধো ভাবে বলতে লাগল, “উদ্ দয় উদ্ দয়।” কিছু একটা গন্ডগোল হবে বুঝতে পেরে অলকা সূর্যসেনার অধিনায়ককে ব্যাপারটা জানিয়ে দুপুর দুপুর পুণ্যব্রতদের বাড়িপৌঁছে গেল।
পুণ্যব্রতদের বাড়ি গঙ্গার ধারে, তাই ঠাণ্ডা একটু বেশিই। সন্ধে হতেই আশেপাশের সব বাড়ির দরজা-জানালা বন্ধ হয়ে যায়। কোথাও আলো দেখা যায় না।
রাত বারোটা নাগাদ পুলিশের জিপ পুণ্যব্রতদের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল। উদয় আর পাঁচজন পুলিশ নাভল। উদয় সদর দরজার কড়া নাড়তে শুরু করল।
সঙ্গে সঙ্গে চারপাশের বাড়িতে বাড়িতে আলো জ্বলে উঠল। সদর দরজা খুলে দশজন সশস্ত্র যুবক বেরিয়ে এসে উদয়কে ঘিরে ধরল। হতচকিত উদয় কোনোরকমে পুলিশকর্মীদের আদেশ দিল, ” ফায়ার!”
পুলিশকর্মীরা তার কথায় কান না দিয়ে জিপে উঠে গেল। উদয়কে প্রায় একশজন ঘিরে ধরেছে। অলকা খুশিতে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠল, “বন্দেমাতরম্!”

ekhansangbad
Author: ekhansangbad

Related News