শিশু সাহিত্যের প্রখ্যাত লেখক এবং ভারতীয় শিল্পে স্বদেশী মূল্যবোধের প্রথম প্রবক্তা অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম ১৮৭১ সালের ৭ আগষ্ট ।
গুনেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং সৌদামিনী ঠাকুরের সন্তান অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম কলকাতার জোড়াসাঁকোতে । তাঁর ঠাকুরদা ছিলেন গিরীন্দ্রনাথ ঠাকুর, “প্রিন্স” দ্বারকানাথ ঠাকুরের দ্বিতীয় পুত্র। অবনীন্দ্রনাথ সম্পর্কে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভ্রাতুষ্পুত্র ছিলেন।
তিনি বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারের মধ্যে বড় হয়েছেন, শিল্প ও সাহিত্য সবসময়ই তাঁর শৈশবের একটি অংশ ছিল। অবনীন্দ্রনাথের ছদ্মনাম ছিল – রসুল আলী।
ভারতীয় শিল্পকলায় অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বহু অবদান রয়েছে। ১৮৯৬ সালে কোলকাতা আর্ট স্কুলের সহকারী অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন৷ ভারতীয়দের মধ্যে তিনিই প্রথম এই মর্যাদা লাভ করেন৷তিনি ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ওরিয়েন্টাল আর্ট, বেঙ্গল স্কুল অফ আর্টের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাই তাঁকে ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ওরিয়েন্টাল আর্ট’-এর জনক বলা হয়। এছাড়া চিত্রকলা ও সাহিত্যেও তাঁর যথেষ্ট অবদান রয়েছে।
ভারতীয় রীতিতে তার আঁকা প্রথম চিত্রাবলি ‘কৃষ্ণলীলা-সংক্রান্ত’৷ এই রীতি অনুসারী চিত্রশিল্পের তিনি নব জন্মদাতা৷তাঁর আধুনিক ভারতীয় শিল্প আরো অনেক চিত্রশিল্পীকে প্রভাবিত করেছিল, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য এবং বিশিষ্ট হল নন্দলাল বসু, অসিত কুমার হালদার, ক্ষিতীন্দ্রনাথ মজুমদার, মুকুল দে, মনীষী দে এবং যামিনী রায়।
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৯০৫ সালের আঁকা চিত্র ভারত মাতা। যেখানে একটি গেরুয়া কাপড় পরিহিত নারীকে দেখানো হয়েছে। তার চারটি হাতের প্রত্যেকটি হাতে পৃথকভাবে বই, ধানের গোছা, সাদা কাপড়ের টুকরা এবং একটি মালা আছে।
পেইন্টিংটি ঐতিহাসিক মূল্যবোধের কারণেও তাৎপর্যপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়, এটি ভারত মাতার ধারণার বিবরণে সাহায্য করেছিল।
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা কয়েকটি বিখ্যাত ছবি হল অভিসারিকা, পাসিং অফ শাহজাহান, বুদ্ধ এবং সুজাতা, সামার- কালিদাসের রিতু সংঘর থেকে, মাই মাদার, গনেশ জননী, কৃষ্ণের জন্ম, মুনলাইট মিউজিক পার্টি, দ্য ফিস্ট অফ ল্যাম্পস, শাহজাহান ড্রিমিং অফ তাজ প্রভৃতি।
রবীন্দ্রনাথের উৎসাহে তাঁর লেখালেখির শুরু। তাঁর অধিকাংশ সাহিত্যকর্ম ছিল শিশুদের জন্য। তাঁর কিছু বই যেমন ‘বুড়ো আংলা’, ‘ক্ষীরেরপুতুল’, ‘শকুন্তলা’ এবং ‘রাজকাহিনী’ বাংলা শিশুসাহিত্যের সেরা উদাহরণ। আবার বড়দের জন্য লিখেছিলেন ‘বাংলার ব্রত’, ‘কথিকা’, ‘আপন কথা’র মতো প্রবন্ধ। বাংলা সাহিত্যে তিনি ‘অবন ঠাকুর’ নামেই বেশি পরিচিত।
তিনি বলতেন ” শিল্প হচ্ছে শখ। যার সেই শখ ভিতর থেকে এলে সেই পারে শিল্প সৃষ্ট করতে, ছবি আঁকতে, বাজনা বাজাতে, নাচতে, গাইতে, নাটক লিখতে -যাই বলো।”
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রখর আলোতে ঢাকা পড়ে যাওয়া ভারতীয় শিল্প-সাহিত্যের এই উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ককে তাঁর জন্ম দিনে এখন সংবাদ পরিবার জানায় শতকোটি প্রনাম