Select Language

[gtranslate]
৯ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার ২৫শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নেতাজীর শিক্ষাগুরু বেণী মাধব দাসকে শ্রদ্ধাঞ্জলী।


দেশপ্রেমিক বাঙালি পন্ডিত এবং শিক্ষক বেণী মাধব দাস। ১৮৮৬ খ্রীষ্টাব্দের ২২ নভেম্বর তাঁর জন্ম বর্তমান বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার শেওড়াতলী গ্রামে। তার পিতার নাম কৃষ্ণ চন্দ্র দাস। দর্শন শাস্ত্রে উচ্চ শিক্ষা লাভ করার পর তিনি চট্টগ্রাম কলেজে শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন। তার হাতে পড়ে চট্টগ্রাম কলেজ আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। চট্টগ্রামের পর তিনি ঢাকা, কটকের র‍্যাভেনশ স্কুল, নদীয়ার কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুল ও কলকাতার স্কুল ও কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। বেণী মাধব দাস ব্রাহ্ম নেতা মনীষী কেশবচন্দ্র সেনের প্রভাবে তিনি ব্রাহ্ম সমাজে যোগ দেন, এবং ব্রাহ্ম সমাজের প্রকাশনা ইন্ডিয়ান মেসেঞ্জার ও নববিধান-এর সাথে যুক্ত ছিলেন।

তবে এই আদর্শ শিক্ষকের বড় পরিচয় তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সর্বাধিনায়ক নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর শিক্ষা গুরু।বেণী মাধব দাসের পরিবার রাজনৈতিক পরিবার। অসহযোগ ও জাতীয় আন্দোলনের যোগ দেওয়ার কারণে তার মেজ ছেলে কারাবরণ করেন। পত্নী সারদা দেবী। সারদা দেবী সমাজ সেবায় সক্রিয় ছিলেন। তাদের দুই কন্যার নাম কল্যাণী দাস এবং বীণা দাস। কল্যাণী দাস সমাজ সেবা ও বিপ্লবী কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন। তিনি ছাত্রী সংঘের উদ্যোক্তা ছিলেন এবং ব্রিটিশ বিরোধী রাজনীতির জন্য কারাবরণ করেন। বীণা দাস ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র বিপ্লবে সক্রিয় ছিলেন এবং ১৯৩২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এর সমাবর্তনে বাংলার ব্রিটিশ গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে পিস্তল দিয়ে গুলি করে হত্যা প্রচেষ্টার জন্য ৯ বছর কারা বরণ করেন। মেয়ের বিপ্লবী কার্যকলাপে বাধাদান তো দূরস্থান, দেশপ্রেমিক বেনীমাধব রীতিমতো উৎসাহ প্রদান করেছিলেন।

নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু স্কুল জীবনে বেণী মাধব দাসের ছাত্র ছিলেন। বালক সুভাষের মনোজগতে গভীর রেখাপাত করেন বেণী মাধব। বলা যায় সুভাষ বসুর দেশপ্রেমের বীজ রোপন হয় বেণী মাধবের হাতে। নেতাজী তাঁর “ভারত পথিক” গ্রন্থে বেণী মাধব দাসের কথা উল্লেখ করেছেন। স্বাধীনতা সংগ্রামকে আরো জোরদার করতে দেশান্তরের পূর্বে দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সর্বাধিনায়ক সুভাষ চন্দ্র বসু তাঁর প্রিয় শিক্ষকের কাছে আশীর্বাদ নিতে গিয়েছিলেন।

কেবল মাত্র নেতাজী একা নন,কটক র‌্যাভেন’শ কলেজে তাঁর ছাত্র ছিলেন নেতাজী সুভাষ বসুর অগ্রজ সতীশ চন্দ্র বসু, শরৎ চন্দ্র বসু এবং পরবর্তী সময়ে অন্যান্য শিক্ষায়তনে দর্শন শাস্ত্রের খ্যাতিমান অধ্যাপক ড. শিশির কুমার মৈত্র, কলকাতা সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি সুধীর কুমার দাস, খ্যাতনামা চিকিৎসক ডা. রামকৃষ্ণ অধিকারী ও অধ্যাপক বীরেন্দ্র আচার্য প্রমুখ। কটক সরকারি কলেজিয়েট স্কুলেই কিশোর সুভাষ চন্দ্র বেণী মাধবের আন্তরিক স্নেহ সান্নিধ্য লাভ করেন।


বেণী মাধব দাসের সুযোগ্য কন্যা বিপ্লবী বীণা দাশ বলেছেন, “দেশের কাজে বাবার জীবনের একটি মহান অবদান-নেতাজী সুভাষ চন্দ্র। সুভাষ চন্দ্র তো শুধু বাবার ছাত্রই ছিলেন না, বাবার জীবনের শ্রেষ্ট গৌরব যে তিনিই। বাবার চরিত্রে আলোক সম্পাতে যে কিশোরটি একদিন প্রথম শতদল মেলে ফুটে উঠেছিল, একদিন সেই মহৎ জীবনেরই সৌরভে, সৌন্দর্যে, দীপ্তিতে সমস্ত দেশটাই পরিপ্লাবিত হয়ে গিয়েছিল।”

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে তাঁর কৃতীছাত্র প্রখ্যাত চিকিৎসক ডা. রামচন্দ্র অধিকারীর সঙ্গে আলাপচারিতার ফাঁকে আচার্য বেণী মাধব দাস সম্পর্কে বলেছিলেন-‘বেণীবাবুকে আমি জানি-আদর্শ চরিত্র, আদর্শ গুরু। তাঁকে বড়ো শ্রদ্ধা করি।’

ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ডা: যাদু গোপাল মুখোপাধ্যায় বেণী মাধব দাসের ছেলেকে এক চিঠিতে লিখেছিলেন, “বহুদিনাবধি দূর থেকে আপনার পরমারাধ্য পিতৃদেবকে জানতাম ও আন্তরিক শ্রদ্ধা করতাম। জাতিকে গড়ে তোলার কাজে যাঁরা ব্রতী ছিলেন তাঁদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম- শুধু অন্যতম নয়, একেবারে অগ্রণী।”

আর খোদ নেতাজী তাঁর শিক্ষা গুরু-দেশ প্রেমের দীক্ষা গুরু সম্পর্কে ’ভারত পথিক’ গ্রন্থে লিখেছেন-‍ “His words seemed to pierce through my soul, then I ceased to listen, but continued to gaze at his impassioned countenance, which spoke volumes to me. There was an impression, a glow which I had seen in the portrait of Keshab Chandra. And no wonder-since he was Keshab’s ardent disciple and devotee?””

আচার্য বেণী মাধব দাস ২ সেপ্টেম্বর ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। হে গুরুদেব এখন সংবাদ পরিবার নতমস্তকে আপনাকে শতকোটি প্রণাম জানায়

ekhansangbad
Author: ekhansangbad

Related News